ইম্পোস্টার সিনড্রোম | Imposter Syndrome

Imposter Syndrome

ইম্পোস্টার সিনড্রোম হলো এমন এক ধরণের মানসিক অবস্থা যে একজন মানুষ নিজের যোগ্যতা বা অর্জনকে সন্দেহের চোখে দেখে ও নিজেকে অযোগ্য মনে করে। মনে মনে সে ভয় পায় যে অন্যরা হয়তো তার অযোগ্যতা জেনে যাবে।
সেন্ট্রাল ল্যাংকশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. স্যান্ডি ম্যান এই সিনড্রোমকে তিনটি আলাদা বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে চিহ্নিত করেন। “প্রথমটি হলো আপনার দক্ষতা বা যোগ্যতা নিয়ে অন্যদের ধারণা অতিরঞ্জিত, দ্বিতীয়টি হলো আপনার মনে ভয় কাজ করে যে শিগগিরই আপনার সীমাবদ্ধতা অন্যের কাছে প্রকাশ পেয়ে যাবে। আর তৃতীয়ত আপনি যে যোগ্য সেটা অন্যদের বোঝাতে ক্রমাগত অন্যদের কাছে নিজের সাফল্য প্রচার করেন”।
সত্তরের দশকে প্রথমে এ বিষয়ে কথাবার্তা শুরু হয় এবং মনে করা হয় যে সত্তর ভাগ মানুষই জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে এতে আক্রান্ত হন।
ধরনঃ ভ্যালেরি ইয়ং দ্য সিক্রেট থটস অব সাকসেসফুল উইমেন: হোয়াই ক্যাপাবল পিপল সাফার ফ্রম দ্য ইমপোস্টার সিনড্রোম অ্যান্ড হাউ টু থ্রাইব ইন স্পাইট অব ইট বইয়ে ইমপোস্টার সিনড্রোমকে ৫টি সাবগ্রুপে ভাগ করেন।
১.পারফেকশনিস্ট
২. সুপারউইমেন বা ম্যান
৩. সহজাত প্রতিভাবান
৪. একাকী মননের ব্যক্তি
৫. বিশেষজ্ঞ

ইম্পোস্টার সিনড্রোমে আক্রান্ত বিখ্যাতরাঃ
নিজের যোগ্যতা বা দক্ষতা নিয়ে সংশয় বিখ্যাত ব্যক্তিদের অনেকের মধ্যেই ছিল বা আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্র বা পেশার মানুষ যেমন মায়া আঙ্গেলো এবং টম হাংকস, মিশেল ওবামা কিংবা পেনেলোপ ক্রুজ – যারা নি:সন্দেহে সফল ও বিখ্যাত। অথচ তারা প্রত্যেকেই এই কথিত- ইম্পোস্টার সিনড্রোম এর সাথে লড়াই করেছেন।
আলবার্ট আইনস্টাইন তার এক বন্ধুকে বলেছিলেন যে তাকে নিয়ে যে প্রশংসা করা হয় সেটি তাকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। “আমার কর্মজীবন নিয়ে অতিরঞ্জিত ধারণা আমাকে অসুস্থ করে তোলে। নিজেকে একজন স্বতঃস্ফূর্ত প্রতারক ভাবতে বাধ্য হই আমি”।
দু বারের অস্কার জয়ী এবং অন্তত সত্তরটি সিনেমার তারকা অভিনেতা টম হাংকস ২০১৬ সালে অনুধাবন করেন যে পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই আত্ম-সংশয়ের সাথে লড়াই করেছেন তিনি।

“আমি কী করেছি সেটা বিষয় নয়। বিষয়টা হলো কিভাবে এখানে এলাম। যখন মনে হয় আসলে আমি একজন প্রতারক এবং এটিই সব কিছু নিয়ে যায় আমার কাছ থেকে,” টম বলছিলেন এক রেডিও সাক্ষাতকারে।
আর সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা বলেছেন ইম্পোস্টার সিনড্রোম তাকে রীতিমত বিকল করে দিয়েছে, কারণ এটি নিজের ধ্যান-জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাসকে আক্রান্ত করে। “আমার এখনো কিছুটা ইম্পোস্টার সিনড্রোম আছে। এটি কখনো চলে যায়নি এবং মনে হয় বিশ্ব যদি আমাকে গুরুত্ব সহকারে নিতো তাহলে আমি জানিনা কি হতো। আমি শুধু মিশেল রবিনসন, একটি ছোট মেয়ে যে স্কুলে যায়।

নিজের ক্ষতি করা
নিজের আত্ম উন্নয়নের জন্য কিছু আত্ম সংশয় থাকা ভালো কিন্তু ইম্পোস্টার সিনড্রোম খুব দ্রুতই আত্ম বিনাশে ঠেলে দিতে পারে। ড: ম্যান বলছেন এ সমস্যায় আক্রান্ত অনেককে পেয়েছেন তিনি যারা এমনকি উঁচু মানের চাকরী পর্যন্ত ছেড়ে দিতে চেয়েছেন, কারণ তাদের ভয় হতো যদি অন্যরা তার সম্পর্কে জেনে যায়।
অথচ সঠিক পদ্ধতিতেই যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পেয়েছেন তারা। যারা এই সিনড্রোমে ভোগেন তারা ক্যারিয়ারে উপরের দিকে উঠার ক্ষেত্রে দ্বিধায় ভোগেন কারণ তারা মনে করেন ইতোমধ্যেই অনেক উপরে উঠে গেছেন তিনি। “এ সিনড্রোম জীবনের মধ্যে ভয় তৈরি করে যে কেউ আমার সম্পর্কে জেনে যাচ্ছে,” মনোবিদ হানি ল্যাংকেস্টার জেমস বলছিলেন বিবিসিকে। আরেক মনোবিদ এম ওয়ালেস বলছিলেন এটি সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ক্ষতি আনতে পারে।
কিভাবে ইম্পোস্টার সিনড্রোম কাটিয়ে ওঠা সম্ভব?

যদি মনে হয় আপনি এই সিনড্রোমে ভুগছেন, তাহলে নিজের পরামর্শগুলো মেনে দেখতে পারেন:
-ভাবুন আপনি একা নন। বন্ধু ও পরিবারের সাথে কথা বলুন, বুঝবেন যে বহু মানুষই একই সমস্যায় আছে।
-নিজের অর্জন ও যোগ্যতার একটি তালিকা তৈরি করুন। ড: ম্যান বলছেন ভাগ্যই আপনার সব অর্জনের মুলে কিন্তু যখন কাগজে লিখবেন তখন মনে হবে এ চিন্তা হাস্যকর।
-ফিডব্যাক নিন। অন্যের চোখে নিজেকে দেখলে সেটি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় বেশি।
-অন্যদের সম্পর্ক বা অন্যের সাথে তুলনা করবেননা। বরং নিজের গত বছরের কাজের সাথে এ বছরের কাজের তুলনা করুন।
-ব্যর্থতাকে গ্রহণ করুন। “আপনার ব্রিলিয়ান্ট হবার দরকার নেই। তবে যথেষ্ট ভালো হতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top
Share via
Copy link
Powered by Social Snap